ব্যাটিং বিপর্যয়, এ যেন সেই পুরোনো বাংলাদেশ

সেই পুরোনো বাংলাদেশ যেন ফিরে এলো আবারও, ব্যাটিং বিপর্যয় কথাটা শুনতে শুনতে যখন কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার জোগাড় হতো। বিশ্বকাপে বড় দলকে হারানোর পরও যে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে না পারাকে ব্যর্থতা ধরে নিয়েছে, সেই দলটিই শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। ৩১৫ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমত ধুঁকছে টাইগাররা।
প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৫ বল মোকাবেলা করতেই বিদায়ী পেসার লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে মাটিতে পড়ে যান তামিম ইকবাল, তাকে ফাঁকি দিয়ে বল ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। বিশ্বকাপের বাজে ফর্ম শ্রীলঙ্কাতেও পিছু ছাড়লো না দেশসেরা ওপেনারের।

ব্যাটিং বিপর্যয়, এ যেন সেই পুরোনো বাংলাদেশ

দ্বিতীয় উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন সৌম্য সরকার আর মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের ২৯ রানের জুটিটি ভাঙে মিঠুনের এলবিডব্লিউয়ে। নুয়ান প্রদীপের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রক্ষা হয়নি। ২১ বলে ১০ রান করে ফিরতে হয়েছে মিঠুনকে।
এরপর সৌম্যও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বিদায়ী লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তামিমের মতোই স্ট্যাম্প হারান বাঁহাতি এই ওপেনার। ২২ বলে ১ বাউন্ডারিতে করেন মাত্র ১৫। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন ৩ করে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১২ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৩৯ রান। মুশফিকুর রহীম ৬ আর সাব্বির রহমান শূন্য রানে অপরাজিত আছেন।
এর আগে সফরকারি দলের লাগামহীন বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৮ উইকেটে ৩১৪ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। তৃতীয় ওভারেই ওপেনার আভিশকা ফার্নান্দোর উইকেট হারায় তারা। তিন বছর পর দলে ফেরা শফিউল ইসলামই প্রথম আঘাত হানেন।
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে খেলা শফিউল ইসলামকে দিয়েই ইনিংসের শুরুটা করেন দেশের ইতিহাসের ১৪তম ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি ডানহাতি এই পেসার।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে জোরালো আপিল করেও পাননি লেগ বিফোর উইকেট। তবে পঞ্চম বলে অফস্ট্যাম্পের খানিক বাইরে করা বলে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন আভিশকাকে। আউট হওয়ার আগে ১৩ বল থেকে ৭ রান করেন ডানহাতি এ ওপেনার।
তবে ১০ রানে ১ উইকেট হারানোর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে দিমুথ করুনারত্নে আর কুশল পেরেরা গড়েন ৯৭ রানের জুটি। মারমুখী এই জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৫তম ওভারের শেষ বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজুর রহমানের সহজ ক্যাচ হন লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে। ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি তখন ৩৬ রানে।
বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং আর দৃষ্টিকটু ফিল্ডিংয়ে তৃতীয় উইকেটে আরেকটি বড় জুটি গড়ে ফেলেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস। সৌম্য সরকারের করা ২৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মেন্ডিসকে যেভাবে জীবন দিয়েছেন, সেটা পাড়া মহল্লার ক্রিকেটেও সচরাচর দেখা যায় না।
২৮ রানে থাকা মেন্ডিস সৌম্যর বলটি তুলে দিয়েছিলেন লং অনে। দৌড়ে এসে সেটি হাতেই পান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তালুতে নিয়েও ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি।
এরই মধ্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। ২৮তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের প্রথম তিনটি বল ডট নেয়ার পর মিডউইকেট এলাকা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই উদযাপনে মাতেন লঙ্কান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে তার লাগে মাত্র ৮২ বল।
তৃতীয় উইকেটে দুই পেরেরার ১০০ রানের থিতু জুটিটি অবশেষে ভাঙেন বিপদের বন্ধু 'পার্টটাইমার' সৌম্য সরকার। ডানহাতি এই পেসারকে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের সহজ ক্যাচ হন সেঞ্চুরিয়ান কুশল পেরেরা। ৯৯ বল মোকাবেলায় পেরেরা ১১১ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ১৭টি বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায়।
পরের ওভারে এসে কুশল মেন্ডিসকে (৪৩) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান রুবেল হোসেন। ২১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা।
তবে সেই চাপ সহজেই উৎড়ে গেছেন লাহিরু থিরিমান্নে আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ৬৩ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪৫তম ওভারে এসে এই জুটিটা ভাঙেন মোস্তাফিজ। ২৫ করে থিরিমান্নে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন সৌম্যের হাতে।
পরের ওভারে ভয়ংকর থিসারা পেরেরাকে জায়গায় দাঁড়াতে দেননি শফিউল। টাইগার পেসারকে তুলে মারতে গিয়ে মাত্র ২ রানেই সৌম্যর ক্যাচ হন থিসারা। ইনিংসের ৯ বল বাকি থাকতে হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থাকা ম্যাথিউজকেও (৪৮) সাজঘরের পথ দেখান মোস্তাফিজ।
শেষ ১০ ওভারে মোটামুটি ভালো বল করেছে টাইগাররা। ফলে লঙ্কানরা যোগ করতে পারে মোটে ৬৯ রান, সঙ্গে বেশ কয়েকটি উইকেট হারানোয় রানটা প্রত্যাশিতভাবে বাড়েনি স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল শফিউল ইসলাম। ৬২ রানে পান ৩টি উইকেট। ২টি উইকেট শিকার মোস্তাফিজের। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ, রুবেল আর সৌম্য।

Comments

Popular posts from this blog

Banglalink 39 Taka Recharge Offer New

How To Connect Devices To Test Facebook Audience Network Ad [Test device IDFA - AAID ]

FTP Movie Server Bangladesh